Home » Biography » নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর জীবনী বাংলায় প্রবন্ধ রচনা Netaji Subhas Chandra Bose Biography in Bengali

নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর জীবনী বাংলায় প্রবন্ধ রচনা Netaji Subhas Chandra Bose Biography in Bengali

নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর জীবনী বাংলায় Netaji Subhas Chandra Bose Biography in Bengali: উনিশ শতাব্দীর শেষের দিক। পরাধীন ভারত ছিল ব্রিটিশ শাসনের অধীনে। ভারতীয়রা ছিল ব্রিটিশদের দ্বারা লাঞ্ছিত, বঞ্চিত এবং অত্যাচারিত।

ঠিক এই সময় ভারতের এক বীর এবং সাহসী সন্তান জন্মগ্রহণ করেন, তিনি হলেন নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু।

ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে সুভাষচন্দ্র বসুর অবদানঅসামান্য। তিনি ছিলেন প্রকৃত দেশ প্রেমিক। তিনি তার মা-বাবার উপরে দেশকে রেখেছিলেন এবং সম্পূর্ণ জীবন দেশকে স্বাধীন করার জন্য উৎসর্গ করেন।

ভারতবর্ষের বীর সন্তান নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর কথা মনে পড়লেই আমাদের মনে অনেক প্রশ্ন জেগে ওঠে।

আজ আমরা নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর জীবনী বাংলায় (Netaji Subhas Chandra Bose Biography in Bengali) পড়ব।

নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু রচনা

জন্ম২৩ শে জানুয়ারী, ১৮৯৭
বাবার নামজানকীনাথ বসু
মায়ের নামপ্রভাবতী দেবী
স্ত্রীর নামএমিলি
মেয়ের নামঅনিতা বসু
মৃত্যু১৮ ই অগাস্ট, ১৯৪৫
মৃত্যুর কারণবিমান দুর্ঘটনা (তাইওয়ান)
রাজনৈতিক গুরুচিত্তরঞ্জন দাস
রাজনৈতিক দলভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস, ফরওয়ার্ড ব্লক
সেনাবাহিনীআজাদ হিন্দ ফোর্স
যাদের দ্বারা প্রভাবিত হয়েছেনস্বামী বিবেকানন্দ, চিত্তরঞ্জন দাস
দেশ ভ্ৰমণলন্ডন, জার্মানি, রাশিয়া, জাপান, মায়ানমার, তাইপেন, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, অন্যান্য
সাক্ষাৎ করেছেনহিটলার, মহাত্মা গান্ধী, যোসেফ স্টালিন, অন্যান্য
নেতাজীর বিখ্যাত উক্তি“Give me blood, I will give you freedom”
“তোমরা আমাকে রক্ত দাও, আমি তোমাদের স্বাধীনতা দেব।”
নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর রচনা বাংলায়

Netaji Subhas Chandra Bose Biography in Bengali নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর জীবনী রচনা বাংলায়

Subhash Chandra Bose image photo picture, Netaji Subhas Chandra Bose life history in bengali, Netaji Subhas Chandra Bose rachana, Subhash Chandra Bose family, Subhas Chandra Bose paragraph in Bengali, Subhas Chandra Bose Education, Netaji rachana in Bengali, Netaji Subhash Chandra Bose Biography in Bengali, Netaji Subhas Chandra Bose Biography in Bengali, Netaji Subhas Chandra Bose Essay in Bengali, Netaji Subhas Chandra Bose Paragraph in Bengali, নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু প্রবন্ধ রচনা, Biography of Netaji Subhas Chandra Bose, Netaji Subhas Chandra vani bani in bengali
Netaji Subhas Chandra Bose Biography in Bengali নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর জীবনী

সূচিপত্র

নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর জন্ম তারিখ ও জন্মস্থান

নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু ১৮৯৭ সালের ২৩ শে জানুয়ারি উড়িষ্যার কটক শহরে জন্ম গ্রহণ করেন।

নেতাজি জয়ন্তী

প্রতি বছর ২৩শে জানুয়ারী নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর জন্মদিন ‘নেতাজি জয়ন্তী’ হিসেবে উদযাপন করা হয়।

নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর বাবার নাম কি

নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর বাবার নাম জানকীনাথ বসু।

জানকীনাথ ছিলেন কটক শহরের একজন সফল ও বিখ্যাত উকিল, যিনি ‘রায় বাহাদুর’ উপাধি পেয়েছিলেন।

নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর মায়ের নাম কি

সুভাষচন্দ্র বসুর মায়ের নাম প্রভাবতী দেবী।

নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর স্ত্রীর নাম কি

Netaji Subhas Chandra Bose Wife Emili daughter Anita Bose
Netaji Subhas Chandra Bose Wife Emili and daughter Anita Bose

নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর স্ত্রীর নাম এমিলি (Emili)। তাদের একটি কন্যাসন্তান ছিল, নাম অনিতা বসু (Anita Bose)।

প্রাথমিক জীবন

সুভাষচন্দ্র বসু উড়িষ্যার কটক শহরে এক বাঙালি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।

তার সাত ভাই এবং ছয় বোন ছিল। তিনি ছিলেন তার মা-বাবার নবম সন্তান। সুভাষচন্দ্র বসু ও তার ভাই শরৎচন্দ্র খুবই ঘনিষ্ঠ ছিল।

সুভাষচন্দ্র বসুর শিক্ষাগত যোগ্যতা

নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনায় খুব ভালো ছিলেন। তিনি ছিলেন কঠোর পরিশ্রমী এবং সমস্ত শিক্ষক তাকে ভালোবাসতেন।

সুভাষচন্দ্র বসু স্কুলের পড়াশোনা কটক থেকে করেন।

এরপর পড়াশোনার জন্য তিনি পড়াশোনার জন্য তিনি কলকাতাতে চলে আসেন।

কলকাতার Presidency College থেকে তিনি Philosophy তে BA পাশ করেন।

সুভাষচন্দ্র বসু সিভিল সার্ভিস নিয়ে পড়াশোনা করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ব্রিটিশ শাসনে ভারতীয়দের সিভিল সার্ভিস নিয়ে পড়াশোনা করা খুবই কঠিন ছিল।

তার বাবা জানকিনাথ বসু তাকে সিভিল সার্ভিস পড়ার জন্য ইংল্যান্ডে পাঠিয়ে দেন। সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় নেতাজি চতুর্থ স্থান অধিকার করেন।

কিন্তু তিনি সেই চাকরি কে লাথি মেরে নিজেকে দেশ সেবাই নিয়োজিত করেন।

আরও পড়ুন:

নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর জীবন কাহিনী Netaji Subhas Chandra Bose Biography in Bengali Language

রাজনৈতিক জীবন

ভারতে ফিরেই তিনি স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশগ্রহণ করেন এবং রাষ্ট্রীয় কংগ্রেস পার্টিতে যোগদান করেন। প্রথমদিকে সুভাষচন্দ্র বসু কলকাতাতে কংগ্রেসের নেতা ছিলেন।

তিনি চিত্তরঞ্জন দাস এর মৃত্যুর পর তার কাজ শুরু করেন। সুভাষচন্দ্র বসু চিত্তরঞ্জন দাসকে তার রাজনৈতিক গুরু মনে করতেন।

১৯২২ সালে চিত্তরঞ্জন দাস মতিলাল নেহেরুর সাথে কংগ্রেস পার্টি ছেড়ে দেন এবং নিজস্ব পার্টি ‘স্বরাজ দল’ গঠন করেন।

যখন চিত্তরঞ্জন দাশ তাঁর নিজস্ব দলের কর্মীদের নিয়ে রণনীতি তৈরি করছিলেন তখন নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু কলকাতার যুব সমাজের কাছে ভালোবাসা ও বিশ্বাসের পাত্র হয়ে ওঠেন।

সুভাষচন্দ্র বসু যুব সমাজের কাছে নতুন ধরনের চিন্তাধারা নিয়ে আসেন। যার জন্য সেই সময়ের যুবসম্প্রদায় তার প্রতি ঝুঁকে পড়ে এবং তিনি যুবনেতা হয়ে উঠে ওঠেন।

১৯২৮ সালে গুয়াহাটিতে কংগ্রেসের একটি বৈঠক চলাকালীন দলের নতুন এবং পুরনো কর্মীদের মধ্যে একটি কথা নিয়ে মতভেদ সৃষ্টি হয়।

যুব সম্প্রদায় কোন নিয়ম মানতে অস্বীকার করে এবং নিজস্ব নিয়মে চলতে আগ্রহ প্রকাশ করে।

কিন্তু পুরনো নেতা ব্রিটিশ সরকারের তৈরি নিয়ম মেনে চলার জন্য মত পোষণ করেন।

সুভাষচন্দ্র বসু এবং মহাত্মা গান্ধীর বিচার এবং বিশ্বাস সম্পূর্ণ পৃথক ছিল।

সুভাষচন্দ্র বসু গান্ধীজীর অহিংসা নীতির সাথে একমত পোষণ করতেন না। তার চিন্তাধারা ছিল তরুণ যুবকের মত যিনি প্রয়োজনে হিংসার পথে চলতে আগ্রহী ছিলেন।

কংগ্রেস ত্যাগ

১৯৩৯ সালে সুভাষ চন্দ্র বসু রাষ্ট্রীয় কংগ্রেসের অধ্যক্ষ পদের জন্য নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন।

তার বিপক্ষে মহাত্মা গান্ধী সিতারামাইয়া পট্টভিকে মনোনীত করেন, যিনি নেতাজির কাছে নির্বাচনে হেরে যান। গান্ধীজী এই হারকে নিজের হার বলে মনে করেন এবং দুঃখ পান।

নেতাজি এই কথাটি জানতে পারা মাত্র অধ্যক্ষের পদ থেকে ইস্তফা দেন।

চিন্তা এবং বিচারধারা ভিন্ন হওয়ার জন্য সাধারণ মানুষের কাছে নেতাজি ধীরে ধীরে গান্ধী বিরোধীতে পরিণত হচ্ছিলেন। এজন্য তিনি কংগ্রেস ছেড়ে দেন।

আরও পড়ুন: ডঃ বি আর আম্বেদকরের জীবনী

কারাগারে বন্দি

১৯৩৯ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ হচ্ছিল। নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু মনে করেন এটাই সব থেকে উপযুক্ত সময় ইংরেজদের উপর আক্রমণ করে দেশ স্বাধীন করার।

এই বিষয়ে সেই সময় যুব সমাজ তার সাথে একমত ছিল এবং তার সাথে একই পথে চলার জন্য প্রস্তুতি শুরু করে।

যার ফলস্বরূপ ব্রিটিশ সরকারের কাছে সুভাষচন্দ্র বসু চক্ষুশূল হয়ে ওঠেন এবং তারা তাকে কারাগারে বন্দি করে।

কলকাতায় নজরবন্দি

কারাগারে বন্দি থাকাকালীন দুই সপ্তাহ ধরে অন্নজল গ্রহণ না করার জন্য তার স্বাস্থ্য ধীরে ধীরে খারাপ হতে থাকে।

তার এই অবস্থা দেখে দেশের যুব সমাজ জেগে উঠতে শুরু করে এবং তার মুক্তির দাবি তোলেন।

এজন্য ব্রিটিশ সরকার নেতাজীকে কলকাতার একটি বাড়িতে নজরবন্দী থাকার আদেশ দেন।

ছদ্মবেশে পলায়ন

১৯৪১ সালে নেতাজি তার এক আত্মীয় শিশির এর সাহায্যে সেখান থেকে পালিয়ে যান।

সবথেকে প্রথমে তিনি বিহারে যান। তারপর পাকিস্তানের পেশোয়ারে। অতঃপর তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন (বর্তমানে রাশিয়া) হয়ে জার্মানি এসে পৌঁছান।

নেতাজির ভাই ছাড়া আর কেউ জানত না তিনি কোথায় গিয়েছেন। গান্ধীজী, নেহেরু এমনকি ইংরেজরাও চিন্তিত ছিল নেতাজির পলায়ন নিয়ে।

নেতাজি ছদ্মবেশ ধারণে ওস্তাদ ছিলেন। এজন্য তিনি খুব সহজেই ইংরেজদের চোখে ধুলো দিতে পেরেছিলেন।

Also Read: ১৫ টি নীতি কথার গল্প

নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু জীবনী বাংলা

নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর আজাদ হিন্দ ফৌজ গঠন

ভারতবর্ষের বাইরে থেকেও তিনি একটি শক্তিশালী সেনা গঠন করেন, যা আজাদ হিন্দ ফৌজ নামে পরিচিত।

নেতাজি আজাদ হিন্দ ফৌজ একদিনে তৈরি করেননি। এর পিছনে ছিল তার অক্লান্ত পরিশ্রম এবং চেষ্টা। আর ছিল ভারতবর্ষকে স্বাধীন করার এক অদম্য ইচ্ছা।

রাশিয়াতে নেতাজি জোসেফ স্ট্যালিন এর সাথে দেখা করেন এবং তাঁকে বলেন – ‘আপনি আমার শত্রুর শত্রু। এজন্য আপনি আমার বন্ধু।’

স্ট্যালিন নেতাজি কে জার্মানির মুদ্রা দেন এবং তাকে জার্মানি পাঠিয়ে দেন। তিনি সুভাষচন্দ্র বসুর মধ্যস্থতায় জাপানের সঙ্গে সুসম্পর্ক তৈরি করার কথা ভাবছিলেন। নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুকে জোসেফ স্টালিন খুবই শ্রদ্ধা এবং সম্মান করতেন।

জার্মানিতে এসে নেতাজি হিটলারের সাথে দেখা করেন এবং তার কাছে সাহায্য প্রার্থনা করেন। হিটলার নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুকে সব রকম সাহায্য করার প্রতিশ্রুতি দেন।

নেতাজি দেশের বাইরে থেকে ‘আজাদ হিন্দ ফৌজ’ গঠন করা শুরু করেন। নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর জীবনী বাংলায়।

ইংরেজদের হয়ে যে সমস্ত ভারতীয় সৈন্যরা জার্মানির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার সময় যুদ্ধবন্দী হয়েছিল নেতাজি তাদের মুক্ত করে আজাদ হিন্দ ফৌজে যুক্ত করেন।

এইভাবে সারা বিশ্বে যত ভারতীয় যুদ্ধবন্দী ছিল নেতাজি তাদের সবাইকে মুক্ত করে নিজের ফৌজে যুক্ত করেন।

আজাদ হিন্দ ফৌজে মোট ৫৫ হাজার সৈন্য ছিল। সেনা তৈরীর পর এবার সময় ছিল মানুষের সামনে আত্মপ্রকাশ করার।

আরও পড়ুন: এ পি জে আব্দুল কালামের ৫১ টি অনুপ্রেরণামূলক বাণী

নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু জীবনী বাংলা

বার্লিনে রেডিও মারফত নেতাজির আত্মপ্রকাশ

বার্লিনে নেতাজি রেডিও স্টেশন এর মাধ্যমে সবার সামনে উপস্থিত হয়ে ঘোষণা করেন – ‘আমি সুভাষ বলছি, আমি বেঁচে আছি।’

এই কথা শোনা মাত্র দেশবাসীর চোখে আনন্দ অশ্রুধারা বইতে শুরু করে।

জাপানের কাছে সাহায্য প্রার্থনা

আজাদ হিন্দ ফৌজ গঠনের পর এবার সময় ছিল ভারতবর্ষে ইংরেজদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করার।

এজন্য সুভাষচন্দ্র বসু ভারতবর্ষকে স্বাধীন করার জন্য ইংল্যান্ডের শত্রু জাপানের সাথে হাত মেলান।

জাপানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জেনারেল তোজো সুভাষচন্দ্র বসুকে সব রকম ভাবে সাহায্য করার প্রতিশ্রুতি দেন।

১৬ জুন ১৯৪৩ সালে জেনারেল তোজো জাপানি সংসদে ঘোষণা করেন – ‘ভারতের স্বাধীনতার জন্য আমরা সব রকম ভাবে তাদের সাহায্য করব।’

জাপানের পরিকল্পনা ছিল মায়ানমারের পূর্ব দিক থেকে ব্রিটিশদের ওপর আক্রমণ করা এবং আজাদ হিন্দ বাহিনীর সাথে যুক্ত হয়ে ইংরেজদের ভারত থেকে বিতাড়িত করা।

নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু প্রবন্ধ রচনা

সুভাষচন্দ্র বসু ও জাপানের পরিকল্পনা ভেস্তে যায়

১৯৪৪ সালেই আজাদ হিন্দ ফৌজ ও জাপানি সেনা ইংরেজদের ভারত থেকে বিতাড়িত করত।

কিন্তু ভাগ্য বিমুখ ছিল। সেই বছর বর্ষা তাড়াতাড়ি আরম্ভ হয়। ফলস্বরূপ জাপানি সেনা ধীরগতিতে এগোতে থাকে।

১৯৪৪ সালে জাপান দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন বেশ কয়েক বার হারের সম্মুখীন হয়। যার জন্য জাপান সেই সময় ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ না করার সিদ্ধান্ত নেন।

এই সময়টা নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর জন্য খুবই কঠিন ছিল। তাছাড়া আজাদ হিন্দ বাহিনীর কাছে তখন ইংরেজদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার মতো পর্যাপ্ত জন বল এবং যুদ্ধাস্ত্র ছিল না। যার জন্য সমস্ত পরিকল্পনা ভেস্তে যায়।

আরও পড়ুন: শুভ নববর্ষের শুভেচ্ছা বাণী, ছবি, স্ট্যাটাস

ব্রম্ভদেশের রঙ্গুন শহরে সুভাষচন্দ্র বসু

সুভাষচন্দ্র বসু তৎকালীন ব্রহ্মদেশের রঙ্গুণ শহরে ফিরে আসেন।

২৪ অগাস্ট, ১৯৪৪ সালে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু রঙ্গুণ রেডিও স্টেশন থেকে ঘোষণা করেন ইম্ফল সৈন্য কাজ করতে বিফল হয়েছে।

কিন্তু তিনি দেশবাসীকে ইংরেজদের বিরুদ্ধে তাদের সংগ্রাম চালিয়ে যেতে বলেন।

নৌ বিদ্রোহ

সুভাষ চন্দ্র বসুর এই আহ্বানে প্রথমে British Indian Navy এবং পরে British India র সমস্ত সেনা বাহিনী ইংরেজদের বিরোধিতা শুরু করে।

ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ ভারতীয় সৈন্যদের বিরোধিতা এবং নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর কর্মকাণ্ডে প্রচণ্ড ভয় পান।

ব্রিটিশ সরকার আগামী জন সংগ্ৰাম (Civil War) এর গন্ধ পান এবং এই জন্য ব্রিটিশ সরকার খুব তাড়াতাড়ি ভারতকে স্বাধীন করার কথা ঘোষণা করেন।

জাপানের ওপর পরমাণু আক্রমণ

১৯৪৫ সালে আমেরিকা জাপানের হিরোশিমা ও নাগাসাকি শহরে পরমাণু বোমা নিক্ষেপ করে। এর ফলে জাপান পরাজয় স্বীকার করতে বাধ্য হয়।

ব্রিটেন এবং আমেরিকার সৈন্যদল সিঙ্গাপুর, মালই, থাইল্যান্ড ও ব্রম্ভদেশের দিকে এগোতে থাকে।

জাপানের ওপর পরমাণু আক্রমণকালীন নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু (Netaji Subhash Chandra Bose) সিঙ্গাপুরে ছিলেন।

সেখান থেকে এক সপ্তাহ পর ১৬ অগাস্ট ১৯৪৫ সালে নেতাজি থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে পৌঁছান।

আজাদ হিন্দ বাহিনীর মুখ্য কেন্দ্র ছিল ব্যাংকক। সেখানে তিনি জাপানের প্রতিনিধি হেচিয়া তেরু হো র সাথে সাক্ষাৎ করেন।

হেচিয়া নেতাজি কে বলেন ‘জাপানের তরফে তার কাছে আজাদ হিন্দ ফৌজ এর জন্য কোন দিশা নির্দেশ নেয়।’

পরমাণু হামলার পর জাপান একপ্রকার বিধ্বস্ত ছিল। এজন্য নেতাজি আজাদ হিন্দ বাহিনীর পরবর্তী রণনীতি ভাবতে শুরু করেন।

কর্নেল হাবিবুর রহমান বলেন ‘জাপানের সাথে মিটিং এর পর নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু সারারাত ঘুমোতে পারেননি।’

নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু জীবনী বাংলা রচনা

বিমান দুর্ঘটনা

১৭ অগাস্ট ১৯৪৫ সালে নেতাজি Indian National Army র বিমানে চড়ে ব্যাংকক থেকে রওনা দেন এবং দুপুরে ভিয়েতনামের হো-চি-মিনহা শহরে অবতরণ করেন। তার সাথে ছিল – কর্নেল প্রীতম সিং, দেবনাথ গুজরাল সিং, কর্নেল হাবিবুর রহমান এবং আবির হোসেন।

সেখানে আরো একটি প্লেন অবতরণ করে, যেটি ছিল জাপানি লেফটেন্যান্ট ইসোবাকার। সেখানে ইসোবাকা নেতাজি কে INR এর প্লেন ছেড়ে তাদের সাথে যাওয়ার প্রস্তাব দেন। নেতাজি এই প্রস্তাবে রাজি হয়ে যান।

কিন্তু তার অন্যান্য সঙ্গীরা তাকে একলা ছাড়তে রাজি হয় না। এজন্য সুভাষচন্দ্র বসু জাপানীদের সাথে কথা বলে কর্নেল হাবিবুর রহমান কে তার সাথে নিয়ে নেন।

ঠিক সন্ধ্যেবেলায় নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু এবং হাবিবুর রহমান জাপানিদের বিমানে চড়েন। কিছু সময় পর প্লেন রওনা হয়।

অন্যান্য সঙ্গীরা তাদেরকে বিদায় জানানোর জন্য প্লেন পর্যন্ত তাদেরকে এগিয়ে দেন। কিছুক্ষণ পর প্লেন সেখান থেকে রওনা হয়।

বলা হয় যে হোচিমিনহা শহর থেকে বেরোনো সেই প্লেন নেতাজীকে নিয়ে সন্ধ্যে সাতটাই ভিয়েতনামের একটি শহর তুরান এ অবতরণ করে।

সেখানে রাত কাটিয়ে পরদিন সকালে সেই প্লেন রওনা হয়। ঠিক দুপুর দুটোর সময় তাইওয়ানের তাইপিন শহরে তাদের বিমান অবতরণ করে।

তাইপিন এ তারা সকালের খাবার খায়। এরপর প্লেন সেখান থেকে ওড়ার জন্য রানওয়েতে চড়ে।

প্লেন ওড়া শুরু করা মাত্রই একটি ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটে। জাপানি প্লেনের একটি ইঞ্জিন আলাদা হয়ে যায়। মাটি থেকে উচ্চতা খুব একটা বেশি ছিল না – ৩০ থেকে ৩৫ মিটার হবে। ১০৫০০ কেজি ওজনের প্লেন মাটিতে আছাড় খায়।

জাপানি লেফটেন্যান্ট জেনারেল সেই মুহুর্তেই প্রাণ হারান। কিছু মানুষ দুর্ঘটনাগ্রস্ত প্লেন থেকে বেরিয়ে আসেন।

কর্নেল হাবিবুর রহমানের এক পা জখম হয়ে যায়।

প্লেনের ইঞ্জিন অয়েল গোটা প্লেন এমনকি নেতাজীর সিট পর্যন্ত ছড়িয়ে যায়। ইঞ্জিন অয়েল এ আগুন লেগে যায় এবং নেতাজির শরীরেও আগুন ধরে যায়।

কর্নেল হাবিবুর রহমান নেতাজীকে প্লেন থেকে বাইরে আসার জন্য বলেন এবং তারা দুজনে একসাথে প্রেন থেকে বেরিয়ে আসেন।

১০-১৫ মিনিটের মধ্যে এয়ারপোর্টের সুরক্ষা দল সেখানে ছুটে আসে। আহত এবং মৃতদের কাছের একটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।

নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু অনুচ্ছেদ রচনা

সুভাষচন্দ্র বসুর মৃত্যু

হাসপাতালে জাপানি ডাক্তার তেনা এস হে সুভাষচন্দ্র বসু কে বাঁচানোর চেষ্টা করেন।

কিন্তু সারা শরীরে আগুন লেগে যাওয়ার জন্য ভারতের বীর সন্তান সুভাষচন্দ্র বসু হাসপাতালেই প্রাণ ত্যাগ করেন।

পরের দিন ১৯ অগাস্ট ১৯৪৫: কর্নাল হাবিবুর রহমানের স্বাস্থ্য একটু ভালো হলে তিনি বলেন নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর শরীরকে সিঙ্গাপুরে নিয়ে যাওয়া হোক।

জাপানিদের কাছে সেই সময়ে দ্বিতীয় কোন বিমান ছিলনা এবং এই জন্য তারা ক্ষমা প্রার্থনা করে।

কিছুক্ষণ পর সেখানে বিভিন্ন মিডিয়ায এবং ফটোগ্রাফার এসে উপস্থিত হয়। তারা নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর ছবি তোলার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেন। নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর মৃত্যুর প্রমাণ হিসাবে ছবি তোলা আবশ্যক ছিল।

কিন্তু কর্নেল হাবিবুর রহমান তাদের ছবি তুলতে নিষেধ করে দেন। তিনি বলেন ‘পুড়ে যাওয়া দেহের ছবি তুলতে দেওয়া যাবে না। এই বিষয়টি শবদেহের গরিমার বিষয়।’

রাত্রিবেলায় দাহ সংস্কার করা হয়। কর্নেল হাবিবুর রহমান সারারাত সেখানে বসে ছিলেন।

পরেরদিন কর্নেল হাবিবুর রহমান শ্মশানে যান এবং সুভাষচন্দ্র বসুর অস্থি অস্থিকুঞ্জে রাখেন।

নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর মৃত্যু তারিখ কত

১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দের ১৮ অগাস্ট নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু একটি প্লেন দুর্ঘটনায় মৃত্যু বরণ করেন।

আরও পড়ুন: ১০১ টি প্রেমের উক্তি পড়ুন

নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর মৃত্যু রহস্য

Netaji Subhas Chandra Bose Biography Paragraph essay death mystry in bengali, Subhash Chandra Bose history, Netaji Subhas Chandra Bose life history in Bengali, Netaji Subhas Chandra Bose rachana, Subhash Chandra Bose family, Subhas Chandra Bose paragraph in Bengali, Subhas Chandra Bose Education, Netaji rachana in Bengali, Netaji Subhash Chandra Bose Biography in Bengali, Netaji Subhas Chandra Bose Biography in Bengali, Netaji Subhas Chandra Bose Essay in Bengali, Netaji Subhas Chandra Bose Paragraph in Bengali, নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু প্রবন্ধ রচনা, Biography of Netaji Subhas Chandra Bose

অনেকে বিশ্বাস করেন এই প্লেন দুর্ঘটনায় নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু মারা যাননি।

নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর মৃত্যু নিয়ে অনেক রহস্য আছে। ধীরে ধীরে আমরা সেই সমস্ত রহস্য উন্মোচিত করব।

বিমান দুর্ঘটনার পর এক জাপানি গোয়েন্দা ভিয়েতনামে আজাদ হিন্দ বাহিনীর দুইজন যোদ্ধার সঙ্গে দেখা করেন। সেই দুইজন যোদ্ধা ছিল কর্নেল প্রীতম সিং এবং দেবনাথ।

জাপানি গোয়েন্দা আজাদ হিন্দ বাহিনীর সেই দুজন যোদ্ধাকে বলেন ‘সুভাষচন্দ্র বসুর প্লেনে দুর্ঘটনাগ্রস্ত হয়েছে এবং সুভাষচন্দ্র বসু মারা গিয়েছে এই কথাটি সত্য নয়।’

জাপানি গোয়েন্দার কথা শুনে কর্নেল প্রীতম সিং এবং দেবনাথ চমকে যান।

এখান থেকেই শুরু হয় নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর মৃত্যু রহস্য

সব থেকে দুঃখের বিষয় এই যে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বেঁচে আছেন না মারা গিয়েছেন এই সত্যতা যাচাই শুধুমাত্র বাংলা তথা ভারতবর্ষেই হচ্ছিল না, হচ্ছিল ইংল্যান্ডেও।

আমেরিকার শিকাগোতে Triven নিউজ পেপার এর সাংবাদিক Alfred Veg পন্ডিত জহরলাল নেহেরু কে তার প্রেস কনফারেন্সের মাঝখানে থামিয়ে বলেন যে তিনি নেতাজীকে ভিয়েতনামে নিজের চোখে দেখেছেন।

Also Read: একাকিত্ব নিয়ে ১৪০ টি উক্তি

নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর জীবনী বাংলায় প্রবন্ধ রচনা

দিল্লির ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো দ্বারা নেতাজির মৃত্যুর সত্যতা যাচাই এর চেষ্টা

দিল্লির ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো এই বিষয়টির সত্যতা নিয়ে যাচাই শুরু করে।

কর্নেল হাবিবুর রহমানের কথা অনুসারে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু টোকিও যেতেন এবং সেখান থেকে ফিরে এসে নেতাজি ইংরেজদের কাছে আত্মসমর্পণ করতেন।

কিন্তু রহমানের কথার কোনো সত্যতা ছিল না। রহমান শেখানো কিছু কথা তোতা পাখির মত বলছিলেন।

কারণ ইংরেজদের কাছে আত্মসমর্পণ করতে হলে নেতাজি টোকিওতে কেন যাবেন। তিনি সরাসরি দিল্লি আসতে পারতেন।

কিন্তু নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু ইংরেজদের কাছে আত্মসমর্পণ এবং নতি স্বীকার করবেন এই কথাটি স্বীকার করা সম্ভব নয়।

ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো টোকিওতে গিয়ে সমস্ত তথ্য যাচাই করার চেষ্টা করেন। কিন্তু তারা কিছুই প্রমাণ করতে পারে না।

ব্রিটিশ সরকার এবং আমেরিকার তদন্ত

ব্রিটিশ সরকার সুভাষচন্দ্র বসুর মৃত্যু সংবাদ নিয়ে সমস্ত সন্দেহ দূর করে একটি সঠিক সিদ্ধান্তে উপনীত হতে চাইছিলেন। কারণ তারা জানত সুভাষচন্দ্র বসু ভারতবর্ষে ফিরে আসলে আবার সারা দেশে বিদ্রোহের আগুন জ্বলে উঠবে।

ইংরেজ সরকার জানত নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু যদি ভারতের ফিরে আসে তবে ভারত সেভাবে স্বাধীন হবে না যেভাবে তারা করতে চাই, ভারত স্বাধীন হবে নেতাজির মতে ও বিদ্রোহের আগুনে।

ব্রিটিশ সরকার এই সত্যতা যাচাই করার জন্য আমেরিকার কাছে সাহায্য চায়। আমেরিকার গোয়েন্দা বিভাগ ব্রিটিশ সরকারকে জানাই যে তাইপেনে সেদিন কোন বিমান দুর্ঘটনায় হয়নি।

এরপর ব্রিটিশ সরকার আজাদিন বাহিনীর মেজর জেনারেল জে কে ভোঁসলেকে গ্রেফতার করেন। ভোঁসলের উপর অকথ্য অত্যাচার করা হয়।

শেষ পর্যন্ত তিনি স্বীকার করেন আজাদিন বাহিনীর সেনা নায়ক নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু প্রথমে টোকিও এবং সেখান থেকে মাঞ্চুরিয়া যেতেন, কারণ রাশিয়ার জোসেফ স্ট্যালিন নেতাজি কে সবরকম সাহায্য করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল।

নেতাজি রাশিয়াতে আছে এই খবর বিভিন্ন তথ্য এবং ব্রিটিশ গোয়েন্দা সংস্থা MI6 বারবার পাচ্ছিল।  কিন্তু তারা Netaji Subhash Chandra Bose এর নাগাল পাচ্ছিল না।

শাহনবাজ কমিশন (১৯৫৫) ও গোসলা কমিশন (১৯৭০)

১৯৫৫ সালে শাহনবাজ কমিশন এবং ১৯৭০ সালে গোসলা কমিশন নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর প্লেন দুর্ঘটনাকে সত্য বলে স্বীকার করে।

কিন্তু বার বার এই দুই কমিশনের বিরুদ্ধে আঙ্গুল উঠতে শুরু করে।

আরও পড়ুন: শুভ অক্ষয় তৃতীয়া ২০২৩ ছবি ও শুভেচ্ছা বার্তা

মুখার্জি কমিশন (১৯৯৯)

এজন্য ১৯৯৯ সালে মুখার্জি কমিশন গঠন করা হয়।

মুখার্জি কমিশন তার রিপোর্টে বলে সুভাষচন্দ্র বসু দুর্ঘটনায় মারা যাননি এবং সমস্ত তথ্য লুকানো হচ্ছে।

প্রথমে দুটি কমিশন সুভাষচন্দ্র বসুর মৃত্যু রহস্য নিয়ে গভীরভাবে যাচাই করেনি তথা ঘটনাস্থলেও যায়নি।

কিন্তু মুখার্জি কমিশন তাইওয়ান এ গিয়ে সমস্ত তথ্য যাচাই করে। রিপোর্টে মুখার্জি কমিশন বলে ১৯৪৫ সালে তাইপেনের এয়ারপোর্টে কোন বিমান দুর্ঘটনায় ঘটেনি।

নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর জীবনী বাংলায়

গুমনামী বাবাই কি নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু ছিলেন?

কয়েক বছর পরে একটি আশ্চর্য ঘটনা ঘটে।

নেপাল থেকে ‘ভগবান জি’ নামক এক সাধু উত্তরপ্রদেশের Luknow শহরে এসে বসবাস শুরু করেন। সুরেন্দ্র সিং চৌধুরী ছাড়া এই সাধুকে আর কেউ চিনত না।

একদিন এই সাধু একটি চশমার দোকানে নতুন চশমা তৈরি করতে যান। সাধু দোকানে চশমা পড়েন এবং চশমা পড়ে নিজেকে দেখার জন্য তার পাগড়ি সামান্য ওপরে ওঠান।

দোকানে উপস্থিত একটি লোক তাকে চিনতে পারেন এবং আনন্দে চিৎকার করে বলে ওঠেন “নেতাজি”।

দোকানে উপস্থিত অন্যান্য লোকজন সেই লোকটির কথা শুনতে পায় এবং তারা সাষ্টাঙ্গ হয়ে সাধু ভগবান জির পা ছুঁয়ে প্রনাম করে।

সাধু ভগবান জি এবং সুরেন্দ্রনাথ চৌধুরী দোকান থেকে তৎক্ষনাৎ বেরিয়ে পড়েন।

এরপর থেকে সেই সাধু গুমনামি বাবা হিসাবে পরিচিত হয়।

১৯৬৬ সালে প্রবিত্র রায় এর সঙ্গে গুমনামী বাবার সাক্ষাৎ হয়।

পবিত্র রায় বলেন তিনি যখন গুমনামী বাবার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন তখন তিনি দাড়ি বাড়িয়ে রেখেছিলেন। কিন্তু মুখমণ্ডল দেখে এবং কথা বলার ভঙ্গিতে মনে হচ্ছিল তিনি নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু।

Handwriting Expert বি লাল এর নিখুঁত পরীক্ষা

গুমনামি বাবাই যে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু তা আরেক জন প্রমাণ করেছিলেন। তিনি হলেন হ্যান্ডরাইটিং এক্সপার্ট বি লাল।

বি লাল গুমনামি বাবা এবং সুভাষচন্দ্র বসুর ইংরেজি এবং বাংলা হাতের ৪০৬৫ টি লেখা নিখুঁত ভাবে পরীক্ষা করে বলেন – গুমনামি বাবা এবং নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু দুজন একই মানুষ।

১৯৮৫ সালে ফৈজাবাদে গুমনামি বাবা মারা যান এবং তার মৃত্যুর সাথে সাথে অনেক রহস্য রহস্যই থেকে যায়।

নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু রচনা বাংলায়

সুভাষ চন্দ্র বসুর বেঁচে থাকার আরো দুটি প্রমান

১৯৪৫ এর পর Netaji Subhas Chandra Bose বেঁচে ছিলেন সে সম্পর্কে আরো দুটি ঘটনা আছে।

ঘটনা ১

অর্ধেন্দু সরকারের ঘটনা

অর্ধেন্দু সরকার নামে এক ইঞ্জিনিয়ার রাশিয়া গিয়েছিল।

রাশিয়াতে তিনি এমন কিছু প্রমাণ পান যা থেকে বোঝা যায় ১৯৪৮ সাল পর্যন্ত Netaji Subhas Chandra Basu রাশিয়াতে ছিলেন এবং তার কয়েক মাস পরে সুভাষচন্দ্র বসু রাশিয়া থেকে ভারত চলে আসে।

এই বিষয়টি জানার সাথে সাথে অর্ধেন্দু সরকার রাশিয়াতে অবস্থিত ভারতীয় দূতাবাসে যায় এবং সেখানে তিনি সমস্ত প্রমান সহ সব কথা বলেন।

কিন্তু দূতাবাস তরফে অর্ধেন্দু সরকারকে বলা হয় যে তিনি রাশিয়াতে একজন ইঞ্জিনিয়ার হিসাবে এসেছেন, কোন ভারতীয় গোয়েন্দা হিসেবে নয়।

Netaji Subhas Chandra Bose Biography in Bengali

ঘটনা ২

বিজয় লক্ষী পন্ডিতের ঘটনা

আপনারা হয়ত জানবেন বিজয় লক্ষী পন্ডিত জহরলাল নেহেরুর বোন এবং রাশিয়াতে তিনি ভারতের প্রথম দূত ছিলেন।

বিজয় লক্ষী পন্ডিত রাশিয়াতে তার কার্যকাল শেষ করে ভারতে ফিরে আসার পর একটি জনসভায় বলে ফেলেন, রাশিয়াতে তিনি একজন মহান ব্যক্তিত্বকে দেখেছিলেন যার নাম জনসমক্ষে প্রকাশ হলে ১৯৪৭ সালের ১৫ ই আগস্ট ভারতবর্ষে যে পরিমাণ আনন্দ উৎসব উদযাপন করা হয়েছিল তার থেকে আরও বেশি আনন্দের ঢেউ এই দেশে ছড়িয়ে যাবে।

পন্ডিত জহরলাল নেহেরু সেই সময় জনসভায় উপস্থিত ছিলেন এবং তিনি বিজয়লক্ষ্মী পণ্ডিতকে সম্পূর্ণ কথাটা শেষ করার আগেই থামিয়ে দেন।

আরও পড়ুন:


আশা করি আজকের প্রতিবেদন ‘নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর জীবনী বাংলায় প্রবন্ধ রচনা – Netaji Subhas Chandra Bose Biography in Bengali‘ আপনার ভালো লেগেছে এবং নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর জীবন কাহিনী সম্পর্কে অনেক নতুন তথ্য জানতে পেরেছেন।

আর অবশ্যই বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ার করে ‘নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু জীবনী প্রবন্ধ রচনা‘ টি ছড়িয়ে দিন এবং সাধারণ মানুষকে তা জানতে সাহায্য করুন।

আপনার একটি ছোট্ট Share পরবর্তী সময়ে আমাদের এরকম লেখা প্রকাশ করতে আরো বেশি করে উৎসাহিত করবে।

5 thoughts on “নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর জীবনী বাংলায় প্রবন্ধ রচনা Netaji Subhas Chandra Bose Biography in Bengali”

  1. Netaji Subhash Chandra Bose er jiboni bises kore lekhar ditiyo porbe Subhas Chandra Bose er mrittyu rahasya ta khub valo laglo.

    Chalia jan Dada.

    Osadharon ekti lekha porlam.

    Reply
  2. আপনি খুব সুন্দর ভাবে নেতাজি এর জীবনী টা লিখেছেন এই ব্লগে।এছাড়া আপনি খুবই ভালো লেখেন।আপনার ব্লগ টা পড়ে আমার খুব এ ভালোলেগেছে।
    আমারও একটা টেকনোলজি বিষয় এ ব্লগ আছে।
    এমনি ধরনের লিখতে থাকুন।ধন্যবাদ।

    Reply
    • ধন্যবাদ Kaushik, আমাদের লেখা “নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর জীবনী ও মৃত্যু রহস্য” আর্টিকেলটা আপনার ভালো লেগেছে জেনে খুব খুশি হলাম। ভবিষ্যতে আমরা এই রকম আরও লেখা প্রকাশ করার চেষ্টা করব।

      Reply

Leave a Comment